-মুমন কই রে? ও ফোন করে না কেন?
-ভালো আছে ও আম্মা , যেখানে আছে ও অনেক ভালো আছে, তুমি শুধু ওর জন্য দোয়া করো।
-তোর সাথে তো ওর কথা হয়। আমাকে একটা ফোন করে না কেন? ওর ফোন নাম্বার দে আমারে।
কি বলবো ………কিছুদিন পরপর আম্মার একই প্রশ্ন……… ছেলের সাথে কথা বলতে পারছেন না কেন। খুব বেশি চাওয়া তো আর নয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় স্মৃতিশক্তি লোপ আম্মার জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত। ভয়ঙ্কর সেই রাত ভুলে গিয়ে উনি ভালোই আছেন।
মুমন কোথাও ভালো আছে এটা জেনে আমরাও ভালো থাকি।
ছেলেবেলা মানেই অনেক অনেক খেলার স্মৃতি। আর মুমন সেখানে, সবখানে ।
কতরকম খেলা যে আমরা খেলতাম কানামাছি, বরফ পানি, এক্কাদোক্কা, ছোঁয়াছুঁয়ি……আর পুতুলখেলা, রান্নাবাটি তো আছেই। মুমনটা বিরক্তও করতো। আম্মার সাথে কে ঘুমাবে এটা নিয়ে প্রতিদিন রাতে তো শুধু শুধুই ঝগড়া……সবসময় কোথাও যেতে গেলেই পিছুপিছু….নয়তো, আমার বন্ধুদের আড্ডায় বাগড়া দেয়া। শাস্তিও ছিল। এটা ওটা কাজ করাতাম ওকে দিয়ে। পানি নিয়ে আসতে বললে, যদি একটু দেরি হত… এই তোর বেহেস্তের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু…….তাড়াতড়ি…..
আর ওমনি দৌঁড়, দৌঁড়……বেচারা!
চুড়ির অনেক সখ ছিল আমার। বাসার সবাইকে লুকিয়ে লুকিয়ে চুড়ি কিনতাম। আমরা যখন মোহাম্মাদপুর থাকতাম, তখন জেনেভা ক্যাম্পের ওখানে অনেক রেশমী চুড়ি বিক্রি হতো। বেচারা মুমন কত যে কষ্ট করেছে। অতটুকু একটা মানুষ হেঁটে হেঁটে ওখানে যেত বোনের জন্য চুড়ি কিনতে……ভাবতে গেলে বুকের ভিতরে কষ্ট হয়। এত সুন্দর সুন্দর চুড়ি, বিভিন্ন রঙের, সাইজের। সাজিয়ে রাখতেই ভালো লাগতো। মনে হয় ওর ও ভালো লাগত আপাকে খুশি করতে পেরে।
ছেলেবেলার সময়গুলোই আসলে অনেক সুন্দর। সম্পর্কগুলো অনেক সহজ আর সরল।
এতো এতো স্মৃতি ঠেলে কিভাবে ওকে নিয়ে লিখবো বুঝতে পারছি না। যা মনে আছে তা কি লেখায় আনা সম্ভব? যা লিখছি সবই কেমন ফাঁকা ফাঁকা। শুধু জানি রূপবানের জুলহাজ মান্নানকে আমার চেনা হইনি কোনোদিন। তবে আমার অনেক আদরের , মিষ্টি, লাজুক, ছোট্টভাই যে মুমন , সে আমার অনেক চেনা, অনেক কাছের। তোর রুমন আপু ভীষণ মিস করে তোকে।
লেখাটি জুলহাজ মান্নানের বড় বোন উম্মে রুমানার পক্ষ থেকে ছাপানো হয়েছে।
Miss you Xulu.Miss your smile and our get together.